পসি (চলচ্চিত্র)
পসি | |
---|---|
পরিচালক | দুরাই |
প্রযোজক | সি.কে.শন্মুগম
ললিতা জি দুরাই |
রচয়িতা | দুরাই |
শ্রেষ্ঠাংশে | |
সুরকার | শঙ্কর গণেশ |
চিত্রগ্রাহক | ভি রঙ্গা |
সম্পাদক | এম ভেল্লাইচেমি |
মুক্তি | ২১শে ডিসেম্বর ১৯৭৯[১] |
ভাষা | তামিল |
পসি (অনু. ক্ষুধা) হল দুরাই রচিত এবং পরিচালিত ১৯৭৯ সালের ভারতীয়, তামিল ভাষার একটি নাট্য চলচ্চিত্র। এটির মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন শোভা, দিল্লি গণেশ, এবং বিজয়ন। সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, তামিলনাড়ু রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ফিল্মফেয়ার পুরস্কার দক্ষিণ, — প্রতিটিতে দুটি করে পুরস্কার জিতেছিল। এই চলচ্চিত্রটি হিন্দিতে 'পেট পেয়ার অর পাপ' নামে পুনর্নির্মিত হয়েছিল।
ঘটনা
[সম্পাদনা]মানিয়ান, একজন সাইকেল-রিকশা চালক, সে তার স্ত্রী ভল্লিয়াম্মা এবং তাদের সাত সন্তান- দুই মেয়ে ও পাঁচ ছেলেকে নিয়ে রাস্তার ধারে বসবাস করে। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে হয়েও, মানিয়ান তার অল্প আয়ের বেশিরভাগ অংশ নেশার পেছনে ব্যয় করে। রোজগারের বাকি অংশে তার স্ত্রী কোন মতে সংসার চালায়। তার বান্ধবী, রাস্তায় খাবার বিক্রেতা রাক্কাম্মা, ভল্লিয়ামার পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করে।
মানিয়ানের এক পুত্র কৃষ্ণ, যে নিজে শিক্ষিত, সে একটি মেয়ের সাথে পালিয়ে অন্য জায়গায় বসবাস করতে শুরু করে এবং পরিবার থেকে নিজেকে আলাদা করে নেয়। মানিয়ানের মেয়ে কুপ্পাম্মা এবং তার বন্ধু চেল্লাম্মা রাস্তায় ছেঁড়া কাপড় ইত্যাদি কুড়িয়ে এনে বিক্রি করে সামান্য কিছু উপার্জন পরিবারে দেয়। একজন দয়ালু লরি ড্রাইভার, রঙ্গন, কুপ্পাম্মার সাথে বন্ধুত্ব করে এবং যখনই তার কোনও সাহায্যের প্রয়োজন হয় তখন তাকে সহায়তা দেয়। তারা দু'জন একে অপরের ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে এবং তাদের বন্ধুত্ব শারীরিক সম্পর্কে পরিণত হয়। ভল্লিয়াম্মা এই বিষয়টি জানতে পেরে, কুপ্পামার এই কাজে পরিবারের মর্যাদাহানি হয়েছে বলে, লজ্জায় আত্মহত্যা করে। এদিকে, রঙ্গন ইতিমধ্যেই বিবাহিত জানতে পেরে কুপ্পাম্মা হতবাক হয়ে যায়। রঙ্গনের পরিচয় প্রকাশ না করার অভিপ্রায় নিয়ে, সে নিজেকে তার থেকে দূরে রাখে। এই সময়ের মধ্যে, কুপ্পাম্মা জানতে পারে যে সে সন্তান সম্ভবা। তাদের রাস্তার পাশের প্রতিবেশীরা তাকে গর্ভপাত করার পরামর্শ দেয়, কিন্তু সে তা করতে রাজি হয়নি। সে রঙ্গনের পরিচয় কাউকে না দিয়ে তার আত্মীয়স্বজনকে জানায় দুর্ঘটনায় তার প্রেমিক মারা গিয়েছে।
সন্তান প্রসব করার আগে, কুপ্পাম্মা রঙ্গনের সাথে দেখা করতে চায়। কিন্তু কুপ্পাম্মা তার সাহায্য নিতে অস্বীকার করায় রঙ্গন অন্য এক জায়গায় বসবাস শুরু করেছিল। রঙ্গনের স্ত্রী যখন এই সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারে, সে কুপ্পাম্মার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে এবং জোর দিয়ে রঙ্গনকে বলে তাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসতে। রঙ্গন যখন বস্তিতে পৌঁছয়, তখন কুপ্পাম্মার তীব্র প্রসবযন্ত্রণা শুরু হয়ে গেছে। কুপ্পাম্মা শিশুটির জন্ম দিয়েই মারা যায়। রঙ্গন এবং তার স্ত্রী তখন রঙ্গনের পাপের প্রায়শ্চিত্ত হিসাবে শিশুটিকে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
চরিত্র চিত্রণ
[সম্পাদনা]- শোভা- কুপ্পাম্মা
- বিজয়ন- রঙ্গন
- দিল্লি গণেশ- মানিয়ান
- প্রবীণা ভাগ্যরাজ- কুমুদা
- তম্বরম ললিথা- ভল্লিয়াম্মা
- এস এন পার্বতী- রাক্কাম্মা
- সত্যা- চেল্লাম্মা
- সেন্থিল- আরুমুগম, (চেল্লামার ভাই)
- নারায়ণন- সাউন্ড কান্নাইয়া
- আই.এস.রামচন্দ্রন- সাধারণ লোক
- জয়ভারতী- গণিকা
- সুরুলি রাজন- ভিক্ষুক \ রিকশা মালিক
অতিথি শিল্পী
- কমল হাসান- স্বয়ং
প্রযোজনা
[সম্পাদনা]চলচ্চিত্রটি রাস্তার ধারের বাসিন্দাদের দুর্দশার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। দুরাই, যিনি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প���িচিত, গান এবং নাচের অনুক্রমের মতো বাণিজ্যিক দিকগুলির সাথে আপস করে বাস্তবকে তুলে ধরে পসি তৈরি করেছিলেন। ছবির নেপথ্য সঙ্গীত রচনা করেছিলেন শঙ্কর গণেশ। তামিলনাড়ু সরকার চলচ্চিত্রটির জন্য ₹ ১০০,০০০ এর অনুদান ঘোষণা করেছিল।[২]
প্রতিক্রিয়া
[সম্পাদনা]১৯৭৯ সালের ২১শে ডিসেম্বর মুক্তি পেয়ে, চলচ্চিত্রটি সর্বসম্মত প্রশংসামূলক সমালোচনা পেয়েছিল। এটি বক্স-অফিসে সমানভাবে সফল হয়েছিল, এবং প্রেক্ষাগৃহে ১০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে চলেছিল।[২] ১৯৮৪ সালে, দুরাই নিজে হিন্দিতে পেট পেয়ার অর পাপ নামে এটির পুনঃনির্মাণ করেছিলেন। তাতে অভিনয় করেছিলেন স্মিতা পাতিল এবং রাজ বব্বর[৩][৪]
১৯৮০ সালের ১৩ই জানুয়ারী তামিল পত্রিকা আনন্দ বিকটান এর একটি পর্যালোচনায়, দরিদ্রদের জীবনকে চিত্রিত করার জন্য ছবিটির প্রশংসা করেছিল। এটি শোভার অভিনয় এবং রঙ্গার ক্যামেরার কাজেরও প্রশংসা করেছিল। দুরাইয়ের চিত্রনাট্য এবং সংলাপগুলিও সমান প্রশংসা পেয়েছিল তবে ছবিটির শেষে কৃতজ্ঞতা স্বীকার সমালোচিত হয়েছিল কারণ এটি চলচ্চিত্রের চরিত্রগুলির পক্ষে উপযুক্ত নয় বলে বিবেচিত হয়েছিল।[৫] একই বছর এটি তাশখন্দ ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শিত হয়েছিল।[৬]
ছবিটি সেন্থিলকে সকলের সামনে আসার সুযোগ দিয়েছিল, যিনি পরবর্তীতে ১৯৮০ এর দশকে নিজেকে তামিল চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।[৭] শোভার বন্ধু চেল্লামার চরিত্রে অভিনয় করা আরেক নবাগত সত্যা চলচ্চিত্রটির পরে নিজের নামে "পসি" উপসর্গটি অর্জন করেছিলেন।[৮][২]
২৭ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই এবং চলচ্চিত্রের সাফল্যের ১০০তম দিন উদযাপনের একদিন আগে, শোভা তাঁর মাদ্রাজের (বর্তমানে চেন্নাই) বাড়িতে আত্মহত্যা করেছিলেন।[২][৯]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Dhananjayan 2014, পৃ. 260।
- ↑ ক খ গ ঘ Dhananjayan 2014, পৃ. 261।
- ↑ Rangan, Baradwaj। "'I Am Blingbling Bappi-Da'"। Outlook India। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৭।
- ↑ Rangan 2014, পৃ. 212।
- ↑ "சினிமா விமர்சனம்: பசி"। Ananda Vikatan (Tamil ভাষায়)। ১৩ জানুয়ারি ১৯৮০।
- ↑ Parliamentary Debates: Official Report। Council of States, Secretariat। ১৯৮২।
- ↑ "From scratch to success"। The Hindu। ৮ জুন ২০০১। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ "Suspense-filled melodrama"। The Hindu। ৪ এপ্রিল ২০০২। ১০ নভেম্বর ২০০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ "Shobha Mahendra death case: While mystery persists, rumours go on"। India Today। ২৮ জানুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৫।
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Dhananjayan, G. (২০১৪)। Pride of Tamil Cinema: 1931 to 2013। Chennai: Blue Ocean Publishers। আইএসবিএন 978-93-84301-05-7।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- Rangan, Baradwaj (২০১৪)। Dispatches from the Wall Corner : A Journey through Indian Cinema। Tranquebar Press, Westland Ltd.। আইএসবিএন 978-9384030568।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে পসি (ইংরেজি)